সেলজুক আর অটোম্যান সাম্রাজ্যের তুরস্ক, সুলেমান থেকে এরদোগান আর শাহ সুলতান কমরুদ্দিন রুমী থেকে ডেনিজ।

জানেন কি হযরত আইয়ুব নবী ( আঃ) আর হযরত ইউশা  ( আঃ) এর সমাধি কোথায়?

প্যারাগ্লাইডিং করতে চান! তাহলে চলে আসুন ভুমধ্য সাগর তীরের ছোট গ্রাম অলুদেনিযে !

প্রায় ৫০০ বছর ধরে যে সাম্রাজ্যের আধিপত্য ছিল

আসহাবে  কাহাফ, নাম শুনেছেনসেভেন স্লিপের গুহা (কহরমানমারস),

আপনি কি শপিং করতে পছন্দ করেন ! যে বাজারে আছে তিন হাজারেরও বেশী দোকান!

লাইভ টারকিশ রক আর অসাধারণ পপ, ব্লুজ, জ্যাজ এ ভরপুর ইস্তানবুলের আর আঙ্কারার নাইট লাইফ !

আপনি কি  ঢাকার বেইলী রোডের নাট্যপাড়ার ভক্ত বা  মস্কোর বলশয় থিয়েটারের ! তাহলে আপনার জন্যই মাত্র কয়েক শত বছর আগে নির্মিত হয়েছিল হাজার বিশেক দর্শক যেন এক সাথে উপভোগ করতে পারে অ্যাসপেন্ডসের থিয়েটার

আপনি কি বই পড়তে ভালবাসেন ? তাহলে আপনার জন্যই রয়েছে ১৩৫ খ্রিস্টাব্দে প্রতিষ্ঠিত এক লাইব্রেরী।

যেতে চান বিপন্ন লগারহেড কচ্ছপের প্রজনন স্থলে !

হাজার বছর ধরে মানুষ যেখানে স্নান নিচ্ছে, আপনিও কি চান সেখানে স্নান নিতে?

যদি আপনি পর্বতারোহী হন বা পর্বত প্রেমিক, তবে আপনার জন্যই ,০০১ ফুট উঁচু পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট নেমরুতমনে করিয়ে দিবে কমজিনের রাজা প্রথম অ্যান্টিওকাসের  কথা।

২০ হাজার নীল টাইলসের তৈরী  নীল মসজিদ দেখতে চাইলে চলে আসুন এই দেশে !

স্থাপত্য শিল্পের জন্য টপকাপি প্যালেস  --   জাদুঘর এর জন্য মিউজিয়াম অফ আনাতোলিয়ান সিভিলাইজেশনস  --    শপিং আর নাইটলাইফ এর জন্য তাক্সিম স্কয়ার  --  ক্যাম্পিং এর জন্য টেনেডস  --  পাহাড় আর জলপ্রপাত এর জন্য আইদের  --  সমুদ্র সৈকতের জন্য ইজতুজু  --  হ্রদ, জলপ্রপাত, পাহাড় আর প্রকৃতির জন্য উজঙ্গোল  --  --  --  --  --  --




 সেলিমিয় মসজিদ, এডিরনে, তুরস্ক
 সেলিমিয় মসজিদ, এডিরনে, তুরস্ক
সেলিমিয় মসজিদ, এডিরনে, তুরস্ক

আমার এই লেখাটি এন্ট্রি লেভেলের ট্রাভেলার বা টুরিস্টদের জন্য নয়, যারা জানতে চান ভিসা ফি কত? কিভাবে ভিসা করে?  কি কি কাগজ লাগে?  ভিসা কি দেয়? ডলার এন্ডরস্মেন্ট কি লাগবে? এয়ার টিকেট কত? ঢাকা ইমিগ্রেশনে কি কোন সমস্যা করে?  আপনি কি টার্কি ভিজিট করেছেন, তাহলে কি ভিসা হয়েছে?


আমার এই পোষ্টটি মিড বা টপ লেভেলের ট্রাভেলার বা টুরিস্টদের জন্য, যাদের টার্কিশ  ভ্যালিড ভিসা আছে, বা নিজেরাই টার্কিশ ভিসা প্রসেস করতে পারবেন আর টিকেট করতে পারবেন। কিন্তু টার্কির আভ্যন্তরীণ ভ্রমণ বিষয়ক কোন তথ্য প্রয়োজন।






পর্যটকদের জন্য  বিভিন্ন ধরণের দর্শনীয় স্থানের  সমাহার  আশ্চর্যজনক গন্তব্যস্থল এই তুরস্ক !


গম্বুজে ভরপুর ইস্তাম্বুলের আকাশসীমা থেকে   পশ্চিম ও দক্ষিণ উপকূল বরাবর রোমান ধ্বংসাবশেষ পর্যন্ত  বিস্তৃত পর্যটক আকর্ষণ  এই তুরস্ক ! ! 



শুরুটা হয়েছে সেই  ১০৫৩ সাল থেকে তুরস্ক থেকে টার্কিশদের এই বাংলাদেশে আসা, নানা কারণে, নানা ভাবে।  এখনো চলছে  ২০১৭ সাল পর্যন্ত।



টার্কির তৎকালীন সম্রাট  শাহ মালীক এর আপন ভাই , বিখ্যাত সেলজুক রাজপরিবারের উত্তরাধিকারদের একজন, শাহ সুলতান কমরুদ্দিন রুমী। সুলতান কমরুদ্দিন রুমী ছিলেন প্রদেশ গভর্নর। কমরুদ্দিন রুমী প্রদেশ শাসনের পাশাপাশি ছিলেন ধর্ম পরায়ন। ইসলাম ধর্ম প্রচার আর প্রসারের জন্য শাসন ক্ষমতা ত্যাগ করে ইসলাম ধর্ম প্রচারের লক্ষ্যে সেই সুদূর টার্কি থেকে ১০৫৩ সালে ১২ জন সঙ্গী সহ বহু লোক লস্কর নিয়ে চলে আসেন নেত্রকোণা জেলার   মদনপুরে।   


২০০৭ সাল, টার্কির অনেক ব্যবসায়ীরা আসা শুরু করেন ঢাকাতে, বিভিন্ন উদ্দেশ্যে। ঢাকাতে অবস্থিত টার্কিশ হোপ তো এখন অনেক নামকরা স্কুল


 ২০০৮ সালেও টার্কি থেকে অনেক গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশ এসে গুলশানে, উত্তরাতে এসে কোম্পানী ফরমেশন করে ব্যবসা শুরু করেন। পোষাক প্রস্তুত করে নিয়ে যান টার্কিতে, আবার অনেক টার্কিশ শুরু করেন  গার্মেন্টস   স্টক লটের ব্যবসা।




 ২০০৮ এ ডেনিজ ও তার এক টার্কিশ পার্টনার নিয়ে এসেছিল বাংলাদেশে, অনেক সহযোগিতা করেছিলাম ব্যবসার ক্ষেত্রে। আমার বায়িং হাউজের অফিস তখন ডিওএইচএস  বারিধারাতে, ৮ নং রোডের ওয়েস্টে। ডেনিজ সহ অনেক টার্কিশ  গারমেন্টস ব্যবসায়ীরাই আমার অফিসে আসছেন প্রয়োজনে বা অপ্রয়োজনে।


 ডেনিজ এরপরে সম্ভবত ২০১২ এর পরে  উত্তরার জসিমুদ্দিন এ পপুলার হসপিটাল এর বিল্ডিং এর দোতলাতে চালু করে একটি টার্কিশ রেস্টুরেন্ট, যেখানে পাওয়া যায় অনেক ট্র্যাডিশনাল টার্কিশ ফুড।


 আর এখন এই ২০১৭ সালে তো উত্তরা, গুলশানে, বসুন্ধরাতে টার্কিশ ভরপুর।


বাংলাদেশের অনেক আমদানীকারকরাই টার্কি থেকে অনেক প্রোডাক্ট  বাংলাদেশে আমদানী করেন।


ব্যবসায়িক কারনেই স্পেন থেকে টার্কি যেতে হত।   আনতালিয়ার সী বীচ আর  ভূমধ্যসাগরের সমুদ্র সৈকতের রিসর্ট গুলো  থেকে পূর্বের কৃষ্ণ সাগরের কুয়াশাচ্ছন্ন পাহাড় পর্যন্ত বিস্তৃত পর্যটক আকর্ষণ  এই তুরস্ক ! ! 



১। বাংলাদেশ থেকে টার্কিতে এন্ট্রির ক্ষেত্রে লিগ্যালি  তিন ভাবে এন্ট্রি করা যায়ঃ


- ভিসা ছাড়া

- ই ভিসা নিয়ে
আর
- বাংলাদেশের টার্কি এম্বাসী থেকে  স্টিকার ভিসা নিয়ে।

নির্ভর করে প্যাসেঞ্জারের পাসপোর্ট আর  ট্রাভেল  স্ট্যাটাসের উপর।




এন্ট্রির ব্যবস্থা হয়ে গেলে ডলার এন্ডোরসমেন্ট করে ফেলুন। আবার ভাববেন না , যে, ব্যাংক ষ্টেট্ম্যান্ট দিয়ে ভিসা নিলে ডলার এন্ডোরসমেন্ট লাগবে কেন?  মনে রাখবেন বাংলাদেশ থেকে  ভারত সহ পৃথিবীর  যে কোন দেশেই যান না কেন, ডলার এন্ডোরসমেন্ট বাধ্যতামুলক।


৩। টিকেট কাটুন আর টার্কিতে চলে আসুন, এক্ষেত্রে টার্কিশ এয়ার বেষ্ট, ডিরেক্ট ফ্লাইট।


৪। হোটেলে উঠুন আপনার বাজেট অনুসারে।



৫। এর পরে বেড়িয়ে পড়ুন টার্কির দর্শনীয় স্থান সমুহ দেখতে।


 এই হল বাংলাদেশ থেকে টার্কির ভিজিট প্রসেস।


 বাংলাদেশ থেকে একা বা ঢাকার কোন টুর অপারেটর দিয়ে বা বাংলাদেশে থেকেই টার্কিতে অবস্থিত যে কোন টার্কিশ ট্যুর অপারেটর দিয়েও নিম্নলিখিত  সার্ভিসগুলো এরেঞ্জ করা যায়ঃ


১।  টার্কি   এয়ারপোর্ট  থেকে পিক আপ

২। টার্কিতে হোটেল এর ব্যবস্থা
৩। টার্কিশ ট্রাডিশন্যাল ফুড এর এরেঞ্জম্যান্ট
৪। লোকাল টার্কিশ ট্যুর গাইড
৫। লোকাল ট্রান্সপোর্টেশন
৬। সিটি ট্যুর
৭। ট্রাডিশেনাল অ্যান্ড হিস্টোরিক সাইট সিয়িং
৮। এক্সারশন
৯। হাইকিং
১০।এক্সপেডিশন

তবে  টূর  অপারেটর ছাড়া, একা সকল কিছু  প্রসেস করলে, স্বাধীন ভাবে উপভোগ করা যায় টার্কিশ ট্রিপ।


যারা টার্কিতে ভিজিটের প্রসেসটা  জানতে চান, যাবেন বলেই তো প্ল্যান করছেন, তাই না ! সো টার্কিতে গেলে, এই ট্রিপ গুলো অবশ্যই ভিজিট করবেনঃ


১। বুশরা ( টার্কি ) - সালোনিকি ( গ্রীস) - বুশরা ট্রিপ।


বা


২। ইস্তাম্বুল ( টার্কি ) - সোফিয়া ( বুলগেরিয়া ) - ভারনা ( বুলগেরিয়া ) - আঙ্কারা ( টার্কি ) ট্রিপ


বা


৩। বুশরা ( টার্কি ) - ইস্তাম্বুল ( টার্কি ) - ওডেসা ( ইউক্রেন) - আঙ্কারা ( টার্কি ) - আনতালিয়া   ( টার্কি )  ট্রিপ।




আর  টার্কি থেকে  যদি এই ট্রিপটি দিতে পারেন, তবেই বুঝবেন বলকানের অসাধারণ প্রকৃতি ঃ


১।  টার্কি - বুলগেরিয়া - সার্বিয়া - বসনিয়া- মন্টেনেগ্রো - কসভো-- আলবানিয়া  মেসিডোনিয়া  - গ্রীস -  টার্কি। এক্ষেত্রে আকাশ পথে ভ্রমনের চেয়ে স্থল পথ ই ভাল, অন্তত  টুরিজমের ক্ষেত্রে।



সার্বিয়া, বসনিয়া, মন্টেনেগ্রো, কসভো আর  মেসিডোনিয়া , এই পাচটি দেশ তো লিগ্যালি, ভিসা ছাড়াই  ভ্রমণ করা সম্ভব বাংলাদেশী সবুজ পাসপোর্ট দিয়ে।




টার্কিতে  ভিজিট করাকালীন  দেখে আসবেনঃ


১। ১৬০৯ সালে আঙ্কারাতে নির্মিত ব্ল মস্ক, যে মসজিদের সিলিং বিভিন্ন প্যাটার্নের ২০ হাজার নীল টাইলস দিয়ে তৈরী ।

( রাতের ব্লু মস্ক বা নীল মসজিদ )
(সূর্যাস্তের সময়  ব্লু মস্ক বা নীল মসজিদের অভ্যন্তরীণ চত্বর )
(ব্লু মসজিদ ভিতরে্র গম্বুজ, যা এক সাধারণ স্থাপত্য  )
( ব্লু মস্ক বা নীল মসজিদের অভ্যন্তরীণ স্থাপত্য )



২।   দক্ষিণ পশ্চিম  ভুমধ্য সাগর তীরের পাশে, ব্ল লেগুনে,   অলুদেনিয নামের ছোট একটি গ্রাম, প্যারাগ্লাইডিং এর জন্য সবচেয়ে ভাল একটি জায়গা।

                                           ( অলুদেনিয এ প্যারাগ্লাইডিং )



৩।  বাইজানটাইন ও অটোম্যান সংস্কৃতি যুগলবন্দীর এক নিঁখুত সমন্বয় হাজিয়া সোফিয়া, ইস্তাম্বুলে ১৫ শতাব্দীতে অটোম্যানদের দ্বারা প্রতিষ্ঠিত মসজিদ,   "ইম্পিরিয়াল মসজিদ", যা প্রায় ৫০০ বছর স্থায়ী হয়,  যা  ১৯৩৫ সালে রুপান্তরিত হয় জাদুঘরে। হাজিয়া সোফিয়া। ১৯৮৫  সাল থেকে ইউনেস্কো দ্বারা  বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসাবে স্বীকৃত । টোপকাপি প্রাসাদের পাশেই,  ট্রাম ষ্টেশনের কাছে,  ২৫ লিরা দিয়ে টিকেট কিনে  হাজিয়া সোফিয়া দেখতে পারেন। সোমবার বন্ধ থাকে।

হাজিয়া সোফিয়া )

এছাড়াও আছে  সুলায়মানি মসজিদ আর সুলতান আহমেদ মসজিদ, আউপ সুলতান মসজিদ এবং সমাধি, সুলেমনিয়ে মসজিদ,  রুস্তম পাশা মসজিদ, ফাতেহ মসজিদ, সেহজেড মসজিদ, অর্ক্তাকি মসজিদ, বেযে়ত মসজিদ, সকুলু মাহমুদ পাশা মসজিদ।





 ৪। ১৪৫৩ সালে  উস্‌মানীয় সাম্রাজ্যের রাজধানী, ইসলামিক সংস্কৃতির  রাজধানী,   কন্সটান্টিনোপল বা বাইজান্টিয়াম, যা এখন  ইস্তানবুল নামে পরিচিত। ১২.৮ মিলিয়ন মানুষের আবাসস্থল,  টার্কির সংস্কৃতি এবং অর্থনীতির কেন্দ্রস্থল, ঐতিহ্যবাহী এই ইস্তানবুল, ১৯২৩ সাল পর্যন্ত  ছিল টার্কির রাজধানী। এই  ইস্তানবুল ই করেছে ইউরোপ আর এশিয়াকে  বিভক্ত।

 ( ৩০০০ হাজারেরও বেশী দোকান নিয়ে বিশ্বের বৃহত্তম এবং প্রাচীনতম আচ্ছাদিত বাজারগুলির মধ্যে একটি ইস্তানবুলের গ্র্যান্ড বাজার, যার প্রাথমিক নির্মাণ  শুরু হয় ১৪৫৫, প্রতিদিন যেখানে ৪ লক্ষ মানুষ পরিদর্শন করেন। ) 
 ( ইস্তানবুলের গ্র্যান্ড বাজার ) 
( ইস্তানবুলের মিষ্টান্ন বাকলাভা ) 
এছাড়া আছে  আরো কিছু শহর আর প্রদেশ, যেমনঃ   আঙ্কারা, আদানা, আদিয়ামান, আলাচাতি, আফিয়নকারাহিসার, আমাসিয়া আর আরি।




৫। দক্ষিণ-পূর্ব তুরস্কের আদিয়ামান শহরের কাছে ২,১৩৪ মিটার বা ৭,০০১ ফুট উঁচু পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট নেমরুত,  যদি আপনি পর্বতারোহী হন বা পর্বত প্রেমিক, পর্বতমালার চারপাশের পাহাড়গুলির এক চমৎকার দৃশ্য আপনাকে বিমোহিত করবে।  পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট নেমরুত আপনাকে মনে করিয়ে দিবে কমজিনের রাজা প্রথম অ্যান্টিওকাসের  কথা। পর্বতশৃঙ্গ মাউন্ট নেমরুতের প্রধান আকর্ষণ হচ্ছে এর  পূর্ব দিকের তেরেছা কাছ থেকে এক সুন্দর কমলা রঙের সূর্যোদয় দেখা, যা স্থানটির রহস্যের অনুভূতি যোগ করে।


এছাড়া আছে আরারাত পর্বত, ইডা পর্বতমালা আর তোরোস পর্বতমালা




৬।  পামুকালে, মানে  তুলার প্রাসাদ, তুর্কি ভাষায় "তুলো দুর্গ", পশ্চিম তুরস্কের দেনিজলি প্রদেশে এক অবাস্তব ভূদৃশ্য, যা সাদা পোড়ামাটির জন্য বিখ্যাত। হাজার বছর ধরে মানুষ এখানে স্নান নিচ্ছে। উনেস্কো  ১৯৮৮ সালে এই দর্শনীয় স্থানকে বিশ্ব ঐতিহ্যবাহী স্থান হিসেবে ঘোষণা করে। 

পামুক্কালের বিস্তীর্ণ ভূমি ট্র্যাভারটাইন দ্বারা নির্মিত। ট্র্যাভারটাইন একটি পাললিক শিলা যা উষ্ণ জলধারার পানি জমা হয়ে তৈরি করে। পামুক্কালেতে ১৭টি উষ্ণ জলধারা রয়েছে যেগুলোতে তাপমাত্রা ৩৫°সে. থেকে ১০০°সে. পর্যন্ত বিরাজ করে। এসব জলধারা থেকে আগত জল ট্র্যাভারটাইন ভূমির ৩২০ মিটার অবধি প্রবাহিত হয় এবং ৬০ থেকে ৭০ মিটার প্রস্থ ও ২৪০ দৈর্ঘ্যবিশিষ্ট এলাকায় ক্যালসিয়াম কার্বনেটের স্তর জমা করে। যখন সর্বোচ্চ পরিমাণ ক্যালসিয়াম কার্বনেট ধারণ করে ভূপৃষ্ঠে পৌছায়, তখন কার্বন ডাইঅক্সাইড এ থেকে নির্গত হয় এবং ক্যালসিয়াম কার্বনেট জমা পড়ে থাকে। এই জমা হওয়ার প্রক্রিয়া ততক্ষণই চলতে থাকে, যতক্ষণ না পর্যন্ত পানিতে বিদ্যমান কার্বন ডাইঅক্সাইড বায়ুর কার্বন ডাইঅক্সাইডের সাথে সাম্যাবস্থায় পৌঁছায়। এই জমা হওয়া ক্যালসিয়াম কার্বনেট ধীরে ধীরে শক্ত হয়ে ট্র্যাভারটাইনে পরিণত হয়। এই প্রক্রিয়া আবহাওয়ার অবস্থা, পরিবেষ্টনকারী তাপমাত্রা, জলধারার প্রকৃতির উপর নির্ভর করে।
( তুরস্কের পামুকালে  প্রাকৃতিক উষ্ণ জলধারা ও ট্র্যাভারটাইন, বিভিন্ন কার্বনেট মিনারেল উৎপাদিত বিস্তির্ন ভূমি )
( পানির নিচের জমা হওয়া পলিকে ক্ষতিসাধনের হাত থেকে রক্ষার জন্যে পামুক্কালের জলধারায় জুতা পরে নামা নিষিদ্ধ ) 




৭। সেলসিয়াস লাইব্রেরী, যারা আমার মত বইয়ের পোকা, তাদের জন্য। ১৩৫ খ্রিস্টাব্দে ইফালাসে রোমান সাম্রাজ্য কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত সেলসিয়াসের গ্রন্থাগার।




৮। পাতারা বিচ, ভূমধ্যসাগরীয় অঞ্চলের  সবচেয়ে দীর্ঘ ( ১৪ কিমি / ৯ মেইল )  বালুকাময় সমুদ্র সৈকত আর বিপন্ন লগারহেড কচ্ছপের প্রজনন স্থল।  এর নিকটবর্তী গ্রা্‌ সান্তা ক্লজের মতো কিংবদন্তি, বিংশ শতাব্দীর সেন্ট নিকোলাসের জন্মস্থান ছিল।



৯।  অ্যাসপেন্ডসের থিয়েটার,, যারা ঢাকার বেইলী রোডের নাট্যপাড়ার ভক্ত বা  মস্কোর বলশয় থিয়েটারের, তাদের জন্য প্রাচীনকালের শ্রেষ্ঠ সংরক্ষিত এই প্রাচীন থিয়েটার  এস্পেন্দস থিয়েটার। বেশী দিন আগে নয়, এই মাত্র কয়েক শত বছর আগে,  ১৫৫  খ্রিস্টাব্দে রোমান সম্রাট মার্কাস অরেলিয়াসের শাসনামলে অ্যাসপেন্ডসের থিয়েটার নির্মিত হয়েছিল, মাত্র হাজার বিশেক ( ২০,০০০ জন)  দর্শক যেন এক সাথে বসতে পারে। সেলজুক সাম্রাজ্যের সময় স্টেজের এই জায়গাটি ক্যারাভানসেরাই হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এটি ক্রমাগত মেরামত এবং বজায় রাখা হয়েছিল বলেই অ্যাসপেন্ডসের থিয়েটার প্রায় তার মূল গুণাবলী হারানো ছাড়াই অক্ষত অবস্থায়  এত দিন  থাকতে সক্ষম হয়েছে।

( অ্যাসপেন্ডসের থিয়েটার) 

এছাড়া ঃ

১। এদীর্ণ এ আছে  সেলিমিয়া মসজিদ এবং তার সামাজিক কমপ্লেক্স, সুলতান বায়েজিদ কমপ্লেক্স        আর ওল্ড মসজিদ।

২। কোনিয়াতে আছে মেভ্লানা সেলালেদীন ই-রুমী যাদুঘর, আলাউদ্দিন মসজিদ, করতো মাদ্রাসা, এসরেফোগ্লু মসজিদ।


৩। বুসরা তে আছে  গ্র্যান্ড মসজিদ, মুড়ায়দিয় কমপ্লেক্স, সবুজ মসজিদ এবং সমাধি।


৪। শিভাসে আছে: গ্রেট মসজিদ ও দিভরিজি হাসপাতাল, গোক মাদ্রাসা, টুইন মিনেরত মসজিদ, সিফাইয়ে মাদ্রাসা


৫। সনলুড়ফাতে আছে  হিললুর রহমান মসজিদ,আর আইয়ুব নবীর সমাধি, দক্ষিণপূর্ব তুরস্কের উর্ফায় অবস্থিত 'নবী আইয়ুব কমপ্লেক্স'.


৬। হযরত ইউশা ( আঃ ) এর  কবরঃ

 টার্কির ইস্তানবুলের বেকোজ জেলাতে অবস্থিত সবচেয়ে উচু পাহাড়ে হযরত ইউশা ( আঃ ) এর  কবর।  শুধু বশফরসই নয় সুদুর  কৃষ্ণ সাগর পর্যন্ত তার  কর্তৃত্ব ছিল। প্রাচীনকাল থেকে, এই জায়গাটি একটি পবিত্র স্থান হিসাবে গৃহীত হয়েছে।  ইউসা ( আঃ ) ছিলেন  মূসা  ( আঃ) খুব কাছাকাছি সময়ের।  ইউসা ( আঃ ) বাইবেলে বলা হয় যশুয়া। কবরটি ১৭ মিটার লম্বা।

ইউশার নবীর কিছু অলৌকিক ঘটনাঃ

- তিনি সেরিয়া নদী হেটে অতিক্রম করেছেন।
-  গিবন্স যুদ্ধের সময় তিনি দিনকে প্রসারিত করেছিলেন।




তুরস্ক তার ক্রমবর্ধমান সংখ্যক দর্শকদের আকৃষ্ট করছে যারা ইসলামী পবিত্র স্থানের খোঁজে আগ্রহী।  তুরস্কে  দেখতে পাবেন প্রচুর মুসলিম পবিত্র স্থান, মসজিদ, কমপ্লেক্স, সমাধি এবং মাদ্রাসা।


তুরস্ক পবিত্র মসজিদ এবং অটোমান স্থাপত্যের জন্য বিখ্যাত। প্রায় ৫০০ বছর ধরে একটি সাম্রাজ্যের আধিপত্য, অটোমান সুলতান সকল বিশ্বাসের এই পবিত্র স্থানগুলির গুরুত্ব উপলব্ধি করেছিলেন এবং তাদের সংরক্ষণ ও সুরক্ষিত করেছিলেন।


তুরস্কের ধর্মীয় ও বেসামরিক স্থাপত্য, মসজিদ ও সমাধি এবং বিশ্বাসের স্থানগুলির সমৃদ্ধ ঐতিহ্য রয়েছে।



টার্কির  অন্যান্য পবিত্র স্থান সমুহ:

=========================
১। হসি বায়রাম মসজিদ (আঙ্কারা)
২। ফ্লুয়েট মিনার্স মসজিদ (আন্তালিয়া)
৩। গ্র্যান্ড মসজিদ (দিয়ারবাকির)
৪। টুইন মিনরেড মাদ্রাসা (এরিজুরুম),
৫।  সেয়াইদ বাট্টাল গাজী কমপ্লেক্স (এসকিিছির),
৬।  সারেবুরুন মসজিদ (জিয়ারসন),
৭। হাবিব-ই নেছার মসজিদ (হাটাই),
৮।  হিশর মসজিদ (ইজমির),
৯। সেভেন স্লিপের গুহা (কহরমানমারস) ঃ বা কেভ অফ  সেভেন স্লিপার্স বা আসহাবে কাহাফ যার  অর্থ ‘গুহাবাসী’। গুহাটি তুরস্কের এফিসাসে .
১০। নাসরুল্লাহ মসজিদ (কাস্তমুনু),
১১। সুলতান মসজিদ (মানিসা),
১২। গ্র্যান্ড মসজিদ (মারদিন),
১৩। হসি বেকট্রা ভেলি কমপ্লেক্স (নেভসীড়),
১৪।  আলাউদ্দিন মসজিদ (সিনোপ)
১৫। গুলবহার হাটুন কবর এবং মসজিদ (ত্রবযন),
১৬। হুস্রেভ পাশা মসজিদ (ভ্যান)।


 এছাড়া যেতে পারেনঃ

১। ক্যাম্পিং এর জন্য টেনেডস,
২। পাহাড় আর জলপ্রপাত এর জন্য আইদের
৩। সমুদ্র সৈকতের জন্য বুইয়ুকাদা আর ইজতুজু
৪। হ্রদ, জলপ্রপাত, পাহাড় আর প্রকৃতির জন্য উজঙ্গোল


৫। শপিং আর নাইটলাইফ এর জন্য ইস্তিক্লাল এভিনিউ, তাক্সিম স্কয়ার।
  -   ইস্তানবুলের ৩৬০ ডিজের জন্য বিখ্যাত।

  -  টাক্সিম স্কয়ারের অবস্থিত ক্লেইন শুক্রবার এবং শনিবার  রাত  ১১ টা  থেকে  ভোর  ৪ টা পর্যন্ত খোলা       থাকে।

 -  লাইভ মিউজিকের জন্য বিখ্যাত আর ওল্ড পাব এর ডিজাইনে সজ্জিত জলি জোকার বালান্স।  টারকিশ রক আর পপে আসক্ত যারা, তাদের জন্য বেষ্ট।

এছাড়া আছে, লিভিং ইন্ডিগো, ব্যাবিলন বমোন্তি,  আল জামাল, সাউদা, রুবি, রেইনা আর সরতি, যেখানে  শুনতে পারবেন লাইভ, জ্যাজ, রক, পপ, ব্লুজ সহ আরো কত কি।  


৬। জাদুঘর এর জন্য ইস্তানবুল মডার্ন আর্ট মিউজিয়াম, মিউজিয়াম অফ আনাতোলিয়ান সিভিলাইজেশনস, টার্কিশ এন্ড ইসলামিক আর্ট মিউজিয়াম , বদ্রুম ক্যাসল  , মেভ্লানা মিউজিয়াম, ইস্তানবুল আরকিওলজি মিউজিয়ামস,

৭। স্থাপত্য শিল্পের জন্য সেলিমীঈ মসজিদ, রুস্তেম পাশা মস্ক, টপকাপি প্যালেস।

 আপনাদের টার্কিশ ভ্রমণ হোক আনন্দময় আর বৈচিত্র্যময়।




বিঃদ্রঃ  যে সকল এন্ট্রি লেভেলের টুরিষ্ট বা ট্রাভেলারদের  বাংলাদেশ থেকে  টার্কিশ স্টিকার ভিসা প্রসেসিং এর জন্য   ভিসা চেক লিষ্ট আর ভিসা ফর্ম এর  প্রয়োজন,  তারা টার্কিশ ভিসা চেক লিষ্ট আর ভিসা ফর্ম সহ অন্যান্য তথ্য পেতে  মেইলে যোগাযোগ করতে পারেন।


Comments

Popular posts from this blog

কলকাতা ভ্রমণ

রুদা নদীর তীরে "সবুজ" শহর খ্যাত দক্ষিণপশ্চিম পোল্যান্ডের সিলেসিয়ান ভয়েডেডশিপের শহর রিবনিক ভ্রমণ

ইসলাম গ্রহণকারী প্রথম মঙ্গোল নেতা ও শাসক গোল্ডেন হর্দের প্রধান বারক খানের দেশ মঙ্গোলিয়া