হিচহাইকিং



          ( হিচহাইকিং  এর শুরু)
একবার বেলজিয়ামের রাণী আইনস্টাইনকে আমন্ত্রণ জানালেন তাঁর দেশ সফরের। নির্দিষ্ট দিনে আইনস্টাইনকে রাজপ্রাসাদে নিয়ে যাবার জন্য রেল স্টেশনে হাজির হল গাড়ির বহর। কিন্তু কোথায় তিনি? পুরো রেলস্টেশান তন্নতন্ন করে আইনস্টাইনকে খুঁজেই পাওয়া গেল না! ফিরে চলল বহর রাজপ্রাসাদের দিকে। কিছুক্ষণ পর সাদাসিধে পোশাকে বেহালা বাজাতে বাজাতে রাজপ্রাসাদে হাজির হলেন বিজ্ঞানী আইনস্টাইন। রাণী ব্যাপারটাতে লজ্জিত হলেন। সাথে সাথে ক্ষমা প্রার্থণা করে জানালেন যে, বিজ্ঞানীকে নিয়ে আসার জন্য গাড়ি বহর রেল স্টেশনে গিয়েছিল। কিন্তু তাঁকে না পেয়ে ফিরে এসেছে।
( লিথুয়ানিয়ার ভিলনাসে দাঁড়িয়ে আছি লিফটের অপেক্ষাতে, পোল্যান্ডের ওয়ারশতে যাবার উদ্দেশ্যে)



আইনস্টাইন বললেন- আমি ইচ্ছে করেই গাড়ি বহরকে এড়িয়ে গেছি। আর পায়ে হেঁটে বেহালা বাজাতে বাজাতে এসেছি। যদি আপনার ঐ রাজকীয় গাড়িতে আসতাম, তবে কি এভাবে বেহালা বাজাতে পারতাম? সাধারণ মানুষের মত শহরটাকে দেখে নিতে পারতাম?

হিচ হাইকিং ভ্রমণের একটি সাহসী উপায় এবং অধিকাংশ মানুষ যা মনে করে, প্রকৃতপক্ষে বিপজ্জনক নয় । যদিও আমরা জানি না যে আমরা কার সাথে দেখা করতে যাচ্ছি, কোথায় যাচ্ছি, দিনের শেষে, কোথায় আমার দিনটি শেষ করব! আমরা এটি ভালবাসি! আমরা স্থানীয়দের চোখ দিয়ে দেশ দেখতে পাই এবং তাদের সাথে গল্প ভাগ করে নিয়ে যাই।
কাঠমুন্ডু

আমরা ভিন্ন দেশ ও জাতির সংস্কৃতি ও ঐতিহ্যের সম্পর্কে আরও বেশি জানতে পারি, যদি আমরা আকাশ পথে ভ্রমণ না করে, সড়ক বা নৌ পথে ভ্রমণ করি।সড়ক বা নৌ পথে ভ্রমণ আমাদের এই জগতের বিশালতা সম্পরকে অভিজ্ঞতা দেয়, ভিন্ন দেশের ভভউগলিক দর্শনীয় স্থান, সংস্কৃতি সম্পরকে অভিজ্ঞতা দেয়।

এটি কখনও কখনও চ্যালেঞ্জিং হতে পারে কিন্তু আমরা সেই মুহুর্তগুলি আমাদের ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতার নব সংযোগ হিসাবে দেখতে পাই। আমরা ধৈর্য এবং নমনীয় হতে শিখি, আমাদের প্রবৃত্তিকে বিশ্বাস করতে শিখি, আমাদের পরিবেশের সাথে মানিয়ে নিতে শিখি এবং প্রতিটি মুহূর্ত উপভোগ করি, যা সবসময় সহজ নয়।
( বুরগজ,  স্পেন = পরবর্তী গন্ত্যব্যে বের হবার পূর্বে স্প্যানীশ হোষ্টের কাছ থেকে বিদায়ের পূর্ব মুহূর্তে )

বেশি খরচ না করেও আপনি পারবে্ন দেশ ভ্রমণ করতেঃ
- যদি আপনি হতে চান জন ওয়াটার্স, জ্যাক কেরোলক, জিম মররিসন, টম ক্রুজ ( When the star of Mission Impossible and Rain Man was 18, he often hitch-hiked home from New York City.) বোনো এর মতো হিচ হাইকার।
- যদি আপনার সঠিক উদ্দেশ্য হয় দেশ ভ্রমণ
- যদি আপনি এডভেঞ্চার ভালবাসেন
- যদি আপনি আরামপ্রিয় না হন
- যদি আপনি প্রতিকুলতার মাঝে আশাহত না হয়ে এগিয়ে যাবার চেষ্টা করেন
- যদি আপনি হতে পারেন হিচ হাইকার, নোমাড, সারফার
- যদি আপনি, করতে পারেন হিচ হাইকিং, সারফিং।
( পরবর্তী গন্ত্যব্য স্পেনের আভিলায় যাওয়ার পূর্বে, স্পেনের মাদ্রিদে বিশ্রামরত আমি)

হিচহাইক বা হিচহাইকিং একটি ক্রিয়া পদ্ধতি। এটা কে আঙ্গুল দেখানোও বলা হয়ে থাকে। সাধারনত রাস্তায় কোন চলন্ত গাড়িকে আঙ্গুলের ইশারায় থামিয়ে সেই গাড়িতে বিনামূল্যে ভ্রমন করাকেই হিচহাইক বা হিচহাইকিং বলা হয়। এই পদ্ধতি অবশ্য আমাদের দেশে মোটেই চলেনা , কিন্তু অনেক দেশেই এই হিচহাইকিং পদ্ধতি প্রচলিত। হিচহাইকিংয়ের চিহ্ন বুড়ো আঙুল। রাস্তার পাশে কেউ বুড়ো আঙুল তুলে ইশারা করলে ট্রাকচালকরা বুঝে নেয়, তিনি একজন পর্যটক। যদি সুযোগ থাকে, তাঁকে সহযোগিতা করে। ট্রাকের পেটে তুলে নেয়। যেখানে নামতে চান, বিনা ভাড়ায় নামিয়ে দেয়। অন্যান্য অনেক দেশেই দুরপাল্লার কোন রাস্তায় হঠাত কোন পথচারী তার বুড়ো আঙ্গুল উঁচু করে অনুরোধ করছে তাকে উঠিয়ে নেবার জন্য এবং হয়ত কোন সুহৃদয়বান চালক তার ইশারাকে সম্মান জানিয়ে গাড়ি থামিয়ে তাকে গাড়িতে উঠিয়ে নিয়ে যায়। পাশ্চাত্য দেশগুলিতে যেখানে লোকাল ট্রান্সপোর্ট অহরহ নয় সেখানেই এই হিচহাইক পদ্ধতিটা দেখা যায়। হিচহাইকিংয়ে ঝুঁকিও থাকে। সেই সঙ্গে থাকে রোমাঞ্চ।
রিগা, লাটভিয়া


হিচহাইকিং
=========
হাইওয়েতে কোন গাড়ি আসতে দেখলেই লিফট চেয়ে বুড়ো আঙুল নাচাও। (ঠাঁয় দাড়িয়ে থাকলে ড্রাইভার ভাববেন আপনি ওঁর গাড়ির বা ড্রাইভিং-এর প্রশংসা করছেন। লিফট পেতে কয়েক মিনিট থেকে সারা দিনও লেগে যেতে পারে।

হিচহাইকিং বা শেয়াজার্নিরর পিছনে কোনো রহস্য নেই। গোটা দুনিয়ায় শেয়ার জার্নিই হল কম বাজেটের পর্যটকদের কাছে ঘুরে বেড়ানোর সেরা উপায়।
( স্পেনের বুরগজে )


অল্প দূরত্বের ভ্রমণে
==============
কয়েকদিনের জন্য অল্প দুরত্বে ঘুরতে গেলে রাস্তায় গাড়ি না থামলেও বাইকারদের কাছ থেকে লিফট পেতে পারেন।ছয় থেকে আট কিলোমিটার দুরত্বে হাঁটাই ভাল।হাঁটার অভ্যাস রাখতেইহবে কারণ আপনারকাছে পয়সাও কম আর ফিট থাকাটাও জরুরী।আর কয়েকমাস টানা হাঁটলে তারপর আপনি নিজেই আর এইসব ফ্রীরাইড নিতে চাইবেন না।

থাকবার জায়গা
===========
এক্ষেত্রে আপনাকে ব্যক্তিগত সম্পর্ককে গুরুত্ব দিতে হবে।আপনাকে খুব মিশুকে,একটু রসিক,একটু দয়ালু আর একটু নির্লজ্জ হতে হবে।কোন রকমের ইগো,গোঁড়ামি বা সংকীর্ণতা থাকলে চলবে না। কমাস পরে আপনার পরিবর্তন দেখে আপনি নিজেই অবাক হয়ে যাবেন । দেখবেন আবার আপনার পুরনো বন্ধুদের সঙ্গে,আত্মীয়দের সঙ্গে এমনকি যাদের খারাপ মানসিকতার জন্য আপনি বিন্দুমাত্র পছন্দকরতেন না, তাদের সঙ্গেও আপনার ফের যোগাযোগ হচ্ছে।এবার যোগাযোগ হলে আপনি তাদের জিজ্ঞাসা করুন কদিন তাদের সঙ্গে কাটাতে পারবেন কিনা। উত্তরগুলো আপনাকে অবাক করে দেবে। দেখবেন যাদের আপনি একদম অকাজের ভাবতেন তারাই আপনাকে সাদরে আমন্ত্রণ করছে আর আপনার ঘনিষ্ঠ লোকজন কেমন বাহানা করছে।
( রাইডের অপেক্ষাতে, স্পেনের এলচেতে )

এছাড়াও আশ্রমে,মন্দিরে,গির্জায় বাসটার্মিনালেস, রেল স্টেশনে,ডিভাইডারে পার্কে যেকোন যায়গায় রাত কাটান যেখানে আপনাকে পয়সা দিতে হবে না।এটা শুনতে পাগলামো মনে হলেও, মোটেই তা নয়।শুরু করাটাই কঠিন।একবার শুরু করলে সব আপনা আপনি হতে থাকবে।

খাবার পানি
====
তিরিশ বছর আগেও খাবার পানি সব জায়গায় ফ্রি ছিল। কিন্তু এখন আমরা এরকম একটা বেসিক প্রয়োজনের জিনিসকেও কমার্শিয়ালাইজড করে দিয়েছি।তবে চিন্তা করবেন না খাবার পানির খরচটাও বাঁচান যেতে পারে। সঙ্গে খাবার পানির বোতল রাখুন রাস্তার কল বা ধাবা থেকে তা ভরে নিন।খালি বোতল ক্যারি করুন আর চোখকান খোলা রাখুন।এখনো রাস্তার চারপাশে ফ্রিতে প্রচুর জলের জায়গায় জলপাবেন।গ্রামের মধ্যে দিয়ে ট্রেকিং এর সময় গ্রামের বাড়িতে জল চান।
রাইডের অপেক্ষায় স্পেনের কাস্তিয়া ই লিওনে)

খাবার
====
কম দামে খাবারের প্রচুর লোকাল দোকান আছে।ভুলবেননা এখানে কোটি কোটি গরীব লোকের বাস। আর এরা একশো টাকারও কমে দিন কাটায়।তারাই আপনার প্রেরণা। পেট খারাপের কথা না ভেবে স্হানীয় ধাবায় খান। পেট খারাপের কথা না ভাবলে কিছুই হবে না।আপনার গৃহকর্তার বাড়িতে খান কিন্তু রান্নায় তাকে সাহায্য করুন।মন্দির গুরুদ্বোয়ারা আশ্রমেও খাওয়া দাওয়া করুন। প্রচুর জল খান আর কিছুই হবে না



ব্যাকপ্যাকার অ্যান্ড্রু স্কুরকা, ২০০২ সাল থেকে ২৫ হাজার মাইলের বেশি পথ হেঁটে পাড়ি দেওয়া অ্যান্ড্রু স্কুরকা, ২৯ বছর বয়সের তরুণ অভিযাত্রী বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুতগামী হাইকার যুক্তরাষ্ট্রের ম্যাসাচুসেটস অঙ্গরাজ্যের সিকঙ্ক শহরে জন্ম নেওয়া অ্যান্ড্রু স্কুরকা, ডারহামের ডিউক বিশ্ববিদ্যালয় বিশ্ববিদ্যালয়ের গ্র্যাজুয়েট উচ্চাভিলাষী অভিযাত্রী ট্রেকারদের সুপারম্যান অ্যান্ড্রু স্কুরকা , ২০০৫ সালের পারসন অফ দ্যা ইয়ার অ্যান্ড্রু স্কুরকা,যিনি একজন একজন ব্লগার, অ্যাথলেট, বক্তা ও লেখক ।
( হিচহাইকিং  এর মাঝে স্পেনের বুরগজের একটি পার্কে বিশ্রামরত আমি )

প্রতিটি ব্যক্তির জীবনে অন্তত একবার হলেও হিচ হাইক করা উচিত অথবা অন্ততপক্ষে হিচ হাইকিং নিয়ে চিন্তা করা উচিত। নতুন একটি এলাকা বা নতুন একটি দেশ অন্বেষণ করার জন্য এটি একটি দুর্দান্ত উপায়। কারন কোন অর্থ ব্যয় না করেই, দিনের শেষে কোথায় যাত্রা বিরতি হবে বা সারাদিনে কার সাথে আপনার দেখা হবে, আপনি কিন্তু তা জানেন না। মূলত মানুষ হিচ হাইকারদের তুলে নেয় বন্ধুত্বপূর্ণতার কারনে, বিশেষ করে যারা প্রচুর কথা বলতে পছন্দ করে। তবে কেউ কেউ এর ব্যতিক্রম হতেই পারে।

প্রাচীনকাল থেকেই চীনে কথাটি প্রচলিত আছে যে ১০ হাজার বই পড়ার চেয়ে ১০ হাজার মাইল ভ্রমণ করা বেশি ভালো।
( স্পেনের টলেডোতে বসে আছি, হিচ হাইকিং  এর পরবর্তী গন্তব্য স্পেনের আলবাছেতে যাওয়া উদ্দেশ্যে রাইডিং ের অপেক্ষাতে) 

ব্যাকপ্যাকার বা হিচহাইকাররা কখনোই হোটেলে থাকে না আর রেষ্টুরেন্টে খায় না। এটা অনেক কস্টদায়ক শারীরিকভাবে আর আরামদায়ক মানসিকভাবে। সিদ্ধান্ত আপনার কোনটাকে প্রাধান্য দিবেনঃ

- শারীরিক কষ্টকে !
নাকি
- মানসিক প্রশান্তিকে ! !

ব্যাকপ্যাকিং বা হিচহাইকিং মানেই হলঃ যেখানে রাইত, সেখানেই কাইত।

ব্যাক্তিগতভাবে আমার ৭৫% টুরই লাক্সারী , আমার নিজের ব্যবসায়িক ট্যুর। সোম থেকে শুক্র ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকা, আর শনি, রবি দুইদিন নিজের মত করে আশেপাশে ঘুরা। পুরোটাই ৫ স্টার হোটেল একোমোডেশন, লাক্সারি রেষ্টূরেন্টে খাওয়া, লাক্সারী ট্রান্সপোরটেশনে চলাফেরা।

কিন্তু আমার ২৫% টুর ব্যাকপ্যাকিং বা হিচহাইকিং , আমার নিজের একান্ত ব্যক্তিগত ব্যাকপ্যাকিং বা হিচহাইকিং, যেখানে কোন ব্যবসার কাজে ব্যস্ত থাকতে হয় না, যখন আমি শুধুই একজন পিউর( শতভাগ কার্বাইড !  আর ফরমালিন মুক্ত ! !) ব্যাকপ্যা্কার বা হিচহাইকার। ঘন্টার পর ঘন্টা হাটি, কখনো একা, কখনো স্থানীয় কারো সাথে, খাই স্ট্রিট ফুড ( হাইজেনিক আর নিট অ্যান্ড ক্লিন উয়িদ ভেজেটারিয়ান,কখনো ভেগান,কখনো বা ল্যাক্টো ভেগান), খুব কম থাকি ব্যাকপ্যাকিং হোস্টেলে / ডরমিটরিতে, বেশীর ভাগই ঘুমাই স্লিপিং ব্যাগে , সারাদিন খুবই কষ্টের ( শারীরিকভাবে, মানসিকভাবে নয় কিন্তু)। অথচ রাতে যখন ঘুমাতে যাই, স্লিপিং ব্যাগে পিঠ লাগার আগেই ঘুমিয়ে পরি।
কখনোই মনে হয় না পরের দিন সকালে ব্যাকপ্যাকিং বা হিচহাইকিং এ না যাওয়ার কথা, এ যে কি এক নেশা, তা বলে বুঝানো আমার পক্ষে সম্ভব নয়। জাস্টঃ নেশা নেশা এ কি নেশা চোখে ভুলে থাকতে পারি না তোকে(এখানে তোকে বলতে কিন্তু ব্যাকপ্যাকিং বা হিচহাইকিং) অচেনা সপ্ন গুলো তোকে ( নতুন কোন আজানা গন্তব্য) ছুতে চায়।


 ( রাশিয়ান এবং পোলিশ হিচহাইকারদের সাথে আমি রাশিয়ার মস্কোতে, পরবর্তী হিচহাইকিং ের পরিকল্পনারত)

আমি কিন্তু এই ২৫% ব্যাকপ্যাকিং বা হিচহাইকিং ট্যুরটাকেই উপভোগ করি। আমার ক্ষুদ্র জ্ঞানের ৭৫% বা তারও বেশি আহরণ করেছি এই ২৫% ব্যাকপ্যাকিং বা হিচহাইকিং থেকেই।
আস্তাগফিরুল্লাহ ! আল্লাহ তায়ালা আমাকে ক্ষমা করুন আর আরো বেশি ব্যাকপ্যাকিং বা হিচহাইকিং এর তৌফিক দিন।

ব্যাকপ্যা্কার বা হিচহাইকার হিসেবে আমি কখনই খরচ বা আরাম দেখিনা, শুধু দেখি কি ভাবে বিনে পয়সায় বা কম খরচেঃ
- নতুন অচেনা কোনো দেশে গিয়ে সে তার শৈশবের বিস্মিত হওয়ার মতো অনুভূতিটি ফিরে পেতে পা্রি
- বদ্ধ ঘরে না থেকে জগতটাকে দেখতে, কেমন করে ঘুরছে মানুষ যুগান্তরের ঘূর্ণিপাকে, কারণ বাঁশের নল দিয়ে তো আর পুরো আকাশ দেখা যায় না।


     (  এস্তোনিয়ার তাল্লিনে  বাল্টিক সাগরের পাড়ে রাইড রেখে  দাঁড়িয়ে, জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্ট এ যাবার উদ্দেশ্যে) 


পৃথিবীর পথে পথে ঘুরে ফিরে
- প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরা কাপ্তাই লেক থেকে আকর্ষণীয় প্রাকৃতিক দর্শনীয় স্থাপনার নিদর্শন হিমালয়ের কোলে অবস্থিত ছোট্ট শহর বসন্ত ঋতুতে অতুলনীয় পারো, পুনাখা, নাগরকোট
- ইসলামি স্থাপত্য ও শিল্পসৌকর্যের এক অনবদ্য প্রতিফলন লাল বেলেপাথরে নির্মিত কুতুবউদ্দিন আইবক এর কুতুব মিনার আর কুব্বত-উল-ইসলাম মসজিদ থেকে আকাশ চুম্বী শহর ফ্রাঙ্কোনিকা অঞ্চলের অংশ মাইন নদীর তীরের ফ্রাঙ্কফুর্ট
- তুষার-ধবল-স্নেহমসৃণ মর্মর প্রস্তর-বিনির্মিত স্পেনের কর্ডোভা, আলমোরিয়া, সেভিল, টলেডো, মর্সিয়া এবং কারুকার্য-শোভিত গৌরবোন্নত, সৌন্দর্য-সমালঙ্কৃত, সমৃদ্ধিসম্পন্ন গ্রানাডা
- বাল্টিক সাগরের পূর্ব প্রান্তের এস্তোনিয়া থেকে রিগার দুগাভা নদীর তী্‌র
আর
- নিকোলাই গোগলের কিংবা টলস্টয়ের অনন্য বৈচিত্র্যময় প্রাকৃতিক নৈসর্গিক সৌন্দর্যে ভরপুর প্রকৃতির অপরূপ রূপের আঁধার ও লীলাভূমি দিগন্তের এক প্রান্ত হতে অন্য প্রান্তে ঘুরে বেড়িয়ে শেষ না করতে পারা দেশের নেভা নদী ঘেঁষে সেইন্ট পিটার্সাবার্গ থেকে এলবারাস আল্পস, দ্য কার্পাথাইন্স, দ্য কসাস মাউন্টেইন এবং দ্য পিরেনাস
অবধি নিজের যাত্রাপথকে পরিব্যাপ্ত করতে।
- ভ্রমণ করে নিজেকে বিনয়ী করে তোলা যায়, যখন সে জানতে পারে, দুনিয়ার তুলনায় সে কত ক্ষুদ্র আর ভ্রমণ করে কিভাবে পরমতসহিষ্ণুতা শেখা যায়।
- নতুন কোনো শহরে একাকী ঘুম থেকে জেগে পৃথিবীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ আনন্দের অনুভূতি পাওয়া যায় আর পৃথিবী নামক বইটা পড়তে পারে আর নিজেকে জানতে পারে
- ভ্রমণের আগে তারা সব জামা কাপড় আর টাকা এক জায়গায় করে আর সেখান থেকে অধেক কাপড় এবং দ্বিগুন টাকা নিয়ে যাত্রা করে, ভ্রমণ শেষে বাড়িতে ফেরার আগ পর্যন্ত তারা বুঝতে পারে না ভ্রমণ কত সুন্দর ছিল।
- গন্তব্যে পৌছানোর উদ্দেশ্য ছাড়া আর কোনো নিদিষ্ট পরিকল্পনা ছাড়া ভ্রমণ করতে পারে আর ভ্রমণের মাধ্যমেই সে জানতে পারে ভিনদেশ সম্পকে তার কত ভূল ধারণা ছিলো।
( নেপালের নাগরকোটে আমি সহ হংকং, নেপাল, সিঙ্গাপুর, স্পেন, টার্কি এবং চেক রিপাবলিক  এর অন্যান্য হিচহাইকার বন্ধুরা )


হিচ হাইকিং আপনাকে অসংখ্য লোকের সাথে দেখা করার সুযোগ দেয়, বিশেষ করে স্থানীয়। বিশেষ করে যখন আপনার কোন সময়সীমা থাকবে না এবং নির্দিষ্ট একটি স্থানে পৌঁছানো আপনার একমাত্র লক্ষ্য হয়। এই ধরনের ভ্রমণ আপনাকে একটি উত্তেজনাময় দু:সাহসিক অভিযানের এক নতুন অভিজ্ঞতা দেয়, যা থাকে বৈচিত্র্যতায় ভরপুর এবং প্রতি মুহূর্তেই আপনাকে আপনার অভিসন্ধানকে পরিবর্তন করার সুযোগ দেয়।


নিজেকে থাম্বিং এর জন্য প্রস্তুত করে নিনঃ
===============================
হিচহাইকার মূলত একটি লক্ষ্যে পৌঁছানোর পথে। যার মানে তারা দীর্ঘ দূরত্ব হাঁটার জন্য প্রস্তুত। কখনও কখনও এটি কয়েক ঘন্টা বা একটি পুরো দিন লিফট নাও পেতে পারেন।
- একটি ভাল মানচিত্র বহন করুন
- দীর্ঘ দূরত্বে হাঁটতে পারেন, এমন জুতা ব্যবহার করুন, যেমন:আরামদায়ক কেডস ( রানিং বাট নট লাইফ স্টাইল) বা ট্র্যাকিং বুট.
- যথেষ্ট পরিমাণ পানি সাথে নিন ( কমপক্ষে ৩ লিটার জন প্রতি), নির্ভর করছে, ঠিক কোন এলাকায় আপনি লিফট পাওয়ার চেষ্টা করছেন।
- সাথে রাখুন ফল, লবনবিহীন বাদাম এবং সেরিয়াল বার, যা আপনাকে ক্লান্ত করবে না এবং আপনাকে ফিট রাখবে।
বাদাম ওমেগা৩ পাবেন । আপেল বা নাশপাতি সঙ্গে রাখুন, এটি আপনাকে আরও শক্তি দিবে এবং আপনাকে সুস্থ ও সবল রাখবে।
মুসেলি ( সেরিয়াল এর মিশ্রণ বিশেষত রোল্ড ওট, শুকনো ফল আর বাদাম, সাধারণত সকালের নাস্তার সময় দুধ দিয়ে খায়।) বার আপনাকে চিনি সরবরাহ করবে এবং আপনি ফিট থাকবেন।
চুইংগাম চিবানো আপনার মুখ দ্রুত শুকিয়ে যাবে না।
- সূর্যের তাপ থেকে মাথা আবৃত রাখতে টুপি ব্যবহার করুন অস্ট্রেলিয়া মত গরম এবং শুষ্ক এলাকায়।
- সাথে হেডফোন রাখুন, সঙ্গী ছাড়া দীর্ঘ সময় হাঁটা, মিউজিক আপনাকে একটি ভাল মেজাজে রাখতে পারে।


( সাল ২০১৬, অস্ট্রিয়ার হিচহাইকারের সাথে দিল্লী থেকে কলকাতার পথে)

আমরা গ্যাজেট নির্ভর হওয়াতে হিচ হাইকিং এর সময় সাথে নিতে পারেন প্রয়োজনীয় কিছু গ্যাজেট!!!, যা হিচ হাইকিংকে করতে পারে সহজ ও নিশ্চিন্ত । যেমনঃ
- ভ্রমণকে সহজ, যোগাযোগ, ছবি তোলা, ভিডিও করা, ম্যাপ দেখা, ট্রাভেল এপস আর পুরোপুরি চার্জড এর জন্য মোবাইল পাওয়ার ব্যাংক সহ স্মার্ট-ফোন।
- যদি আপনি এডভেঞ্চার পাগল হয়ে থাকেন তবে আকাশ থেকে ধারণ করা দৃশ্য এডভেঞ্চার একটিভিটিজ রেকর্ড করতে হট ট্রেন্ড ড্রোন ভিডিও সহ হালকা, ছোট , জটিলতা কম এমন একটি ডিএসএলআর ক্যামেরা বা একশন ক্যাম।
- হালকা, বেশি চার্জ ধরে এরকম একটি ল্যাপটপ বা ট্যাব,
- ইউনিভার্সাল মাল্টি-প্লাগ
- পোর্টেবল হার্ড-ড্রাইভ,
- সোলার চার্জার
- পানি বিশুদ্ধ করার যন্ত্র,


( ঢাকা )

ইতিবাচক থাকুন আর হাসিমুখ অব্যহত রাখুনঃ
=================================
আপনার জন্য এটা খুবই গুরুত্বপূর্ণ নিজেকে ইতিবাচক মেজাজে রাখা এবং সব সময়ে নিজেকে অনুপ্রাণিত করা । যখন আপনি হাঁটতে থাকা অবস্থায় হাসিমুখে নতুন একটি এলাকা পর্যবেক্ষণ করতে থাকেন, তখন আপনি সহজেই লিফট পেয়ে যাবেন।

একজন সুখী হিচহাইকার সর্বদাই স্বল্প সময়ে দূরে যাওয়ার জন্য একটি ভাল রাইড পেয়ে যায়। যদি আপনি একটি গ্রুপে থাকেন, তাহলে সর্বদাই হাসিখুশি থাকুন আর আপনার হাতের তালি ব্যবহার করার চেষ্টা করুন,যা ড্রাইভারগুলিকে হাসিখুশি করে তোলে আর রাইডের লিফট প্রায়শই আসতে থাকে এবং বিশেষ করে নিরিবিলি অঞ্চলে।

Comments

Popular posts from this blog

কলকাতা ভ্রমণ

বাল্টিক সাগরের মুক্তো লাটভিয়ার রাজধানী রিগাতে ভ্রমণ

রুদা নদীর তীরে "সবুজ" শহর খ্যাত দক্ষিণপশ্চিম পোল্যান্ডের সিলেসিয়ান ভয়েডেডশিপের শহর রিবনিক ভ্রমণ